ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে আগামী তিন মাস নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিল। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে এসব কর্মসূচি শুরু হয়ে উপজেলা, জেলা, মহানগরে ধাপে ধাপে তা পালিত হবে। ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সম্প্রতি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এমন কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা দলের হাইকমান্ডকে এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে অবহিতও করা হয়। আজ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট বার্তা না পেলে চলতি মাসের শেষদিক থেকে এসব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে বিএনপি। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দল দুটি কাজ করতে চায়। তারা যেহেতু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চান, এমন প্রেক্ষাপটে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সাংগঠনিক গতিশীলতা তৈরি হবে। অন্যদিকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সরকারের ওপরও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চান, যাতে পরিস্থিতির আলোকে সরকারও নির্বাচন ইস্যুতে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়।
নেতারা আরও বলছেন, রাজনীতির মাঠ এবং জনগণ যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, সেই চিত্রও তুলে ধরবে বিএনপি। তাই প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দলটি এই বার্তাও দিতে চাইবে যে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভোটবঞ্চিত জনগণ এখন গণতন্ত্রে উত্তোরণের অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উন্মুখ। এজন্য জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও ভোটের জন্য প্রস্তুত, তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে যে কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তারা বাস্তবায়িত হতে দেবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের বিষয়ে জানতে আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের যে দীর্ঘ সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি আশ্বস্ত নয়। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষে একেক সময় একেক বক্তব্য ও সময়সীমায় দলটির মধ্যে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই নির্বাচন ঠিক কবে হবে কিংবা নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত অবস্থান কী, ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ব্যাপারে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা জানার চেষ্টা করবেন তারা।
বিএনপি আশা করছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলটি এ-ও বলছে, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত রয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত নির্বাচন চায়। এমন বাস্তবতায় এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই দেশ নির্বাচনমুখী হতে পারে। বিএনপি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
জানা গেছে, বিএনপি সরকারের সঙ্গে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি এই দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখারও পরিকল্পনা করছে। দলটির স্থায়ী কমিটিতেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির অভিমত, যেহেতু এই অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে, সরকারকে সর্বতভাবে সহযোগিতাও করছে। তাই সরকার ব্যর্থ হোক, এটা তারা চায় না। সে কারণে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেবে না দলটি। আবার দাবি আদায়ে কঠোর কোনো কর্মসূচিতেও যাবে না। তবে নির্বাচন যাতে দ্রুত হয় এবং নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ষড়যন্ত্র না হয়, সেজন্য তারা নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চিন্তা করছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক কালবেলাকে বলেন, বিদেশে বসে পতিত স্বৈরাচারের দেশবিরোধী নানান ষড়যন্ত্র এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে সরব উপস্থিতি ও দলীয় অবস্থান শক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে আগামী তিন মাসের টার্গেট নিয়ে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা ও মিছিলের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বিবেচনায় নিয়েছি। একেবারে তৃণমূল অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যায় থেকে এসব কর্মসূচি শুরু হতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে উপজেলা থেকে শুরু হয়ে ধাপে ধাপে জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর ঢাকায় বড় সমাবেশ আয়োজন করা হতে পারে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব কর্মসূচি শুরু হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বুঝে এই সময়ের মধ্যেও ঢাকায় বড় সমাবেশ হতে পারে।