পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় সম্প্রতি একের পর এক ভূমিকম্পের ঘটনায় গোটা অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূকম্পনপ্রবণ দেশগুলোতে যে ধারাবাহিকভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে, তাতে অনেকেই বড় কোনো বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। ঠিক এমন এক সময়েই আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাকিস্তান।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ৫.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটি বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে অনুভূত হয়।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) ভূকম্পনের ঘটনাটি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে, ভূমিকম্পটি রাজধানী ইসলামাবাদসহ রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, শেখুপুরা, অ্যাবোটাবাদ, অ্যাটক, হরিপুর, মানসেহরা, পেশোয়ার, নওশেরা, মারদান, সোয়াত, চিত্রাল, শাংলা, মালাকান্দ, মুজাফফরাবাদসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনুভূত হয়।
জাতীয় ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্তবর্তী পার্বত্য অঞ্চল। ভূগর্ভে এর গভীরতা ছিল ৯৪ কিলোমিটার, যা তুলনামূলকভাবে গভীর বলে বিবেচিত হয়।
কম্পন অনুভব করার পর আতঙ্কিত হয়ে বহু মানুষ ভবন থেকে বেরিয়ে আসে। অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত শুরু করেন। তবে এ পর্যন্ত কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবুও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া একাধিক ভূমিকম্পের মধ্যে অন্যতম। ১২ এপ্রিল ৫.৫ মাত্রার এক ভূমিকম্প ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, পাঞ্জাব ও খাইবার-পাখতুনখোয়া অঞ্চলে আঘাত হানে। এর পরদিন, ১৪ এপ্রিল হিন্দুকুশ অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হওয়া ৪.১ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে উত্তর পাকিস্তানে কম্পন অনুভূত হয়। এছাড়া একই সপ্তাহে মঙ্গল ও বুধবার মধ্যরাতে ৫.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প দেশটির বহু শহরে আতঙ্ক ছড়ায়।
পাকিস্তানের ভূমিকম্পের ইতিহাস ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে। ২০০৫ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে ৭.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ৮৬ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়া ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং বহু গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভূ-প্রাকৃতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। যদিও আজকের ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর নেই, তবুও সতর্কতা ও প্রস্তুতি বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভূমিকম্পপ্রবণ এই অঞ্চলে জনসচেতনতা এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এখন সময়ের দাবি।