ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আরএসএস প্রচারকরা বিয়ে না করে থাকেন কেন?

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Apr 19, 2025 ইং
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি ও দলের পরিচিত মুখ দিলীপ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত ছবির ক্যাপশন: পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি ও দলের পরিচিত মুখ দিলীপ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
ad728

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি এবং দলের পরিচিত মুখ দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি বিয়ে করেছেন দলীয় সহকর্মী রিঙ্কু মজুমদারকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বিয়ে ঘিরে দুই দিন ধরে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। আলোচনা বিশেষভাবে দানা বেঁধেছে দুটি কারণে—প্রথমত, দিলীপ ঘোষ প্রায় ৬০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন, দ্বিতীয়ত, তিনি আরএসএসের ‘প্রচারক’ ছিলেন, আর এই পদে থাকা অবস্থায় সাধারণত বিয়ে করা যায় না।

দিলীপ ঘোষ ১৯৮৪ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ‘প্রচারক’ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে ২০১৫ সালে যখন তাকে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন থেকেই তিনি প্রচারক পদে আর ছিলেন না।

প্রচারক মানেই অবিবাহিত জীবন

সংঘের নিয়ম অনুযায়ী, যাকে রাজনীতিতে পাঠানো হয়, তিনি আর প্রচারক হিসেবে গণ্য হন না। কারণ তখন তার যাবতীয় দায়িত্ব, জীবনযাত্রা ও খরচ বহন করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল।

আরএসএসের প্রচারকদের জন্য বিয়ে না করার নিয়ম দীর্ঘদিনের। সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের নেতা ড. জিষ্ণু বসু জানিয়েছেন, একজন প্রচারকের সমস্ত সময় ও শ্রম সংগঠনের জন্যই নিবেদিত থাকে। পরিবারের দায়ভার গ্রহণ করলে সেই নিবেদনের জায়গায় ঘাটতি আসে। ফলে বিয়ে না করাই প্রচারকদের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। দ্বিতীয় সর-সংঘচালক মাধব গোলওয়ালকরের সময় থেকেই এই নিয়ম চালু হয়। তিনি ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভক্ত এবং সেখানকার কঠোর ব্রহ্মচর্যের আদর্শ থেকেই এ অনুশাসনকে আরএসএসে প্রবর্তন করেন।

তবে ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাথমিক যুগে আরএসএসে অনেক প্রচারক বিবাহিত ছিলেন। এমনকি বর্তমান সর-সংঘচালক মোহন ভাগবতের পিতা মধুকর রাও ভাগবতও ছিলেন একজন বিবাহিত প্রচারক। পরবর্তীতে সংগঠনের কাঠামো বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই অনুশাসন কঠোর হয়।

দিলীপ ঘোষের বিয়েতে আপত্তি ছিল না

দিলীপ ঘোষের বিয়েকে কেন্দ্র করে দল বা সংঘের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি আসেনি। বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, দিলীপ ঘোষের বয়স্ক মায়ের বহুদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল ছেলের বিয়ে হোক। কয়েক বছর ধরে তিনি উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলেন। রাজনীতির ময়দানেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রিঙ্কু মজুমদারের পরিচয় হয় এবং তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল ঘরোয়া, নিউ টাউনের একটি স্থানে আইনি ও বৈদিক রীতিতে অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

অনেক প্রচারক সংসারী হয়েছেন

দলীয় নেতারা বলছেন, দিলীপ ঘোষের বিয়ে নিয়ে কেউ বিস্মিত হননি। বরং এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক নেতা যেমন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি বা ইন্দ্রজিত গুপ্তও জীবনের অনেক পরে বিয়ে করেছিলেন।

আরএসএসে প্রচারক থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে যাওয়া এবং পরে সংসারী হওয়া নতুন কিছু নয়। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুজনই ছিলেন আরএসএস প্রচারক। বাজপেয়ী বিয়ে করেননি, মোদীর বিবাহিত জীবন থাকলেও তা থেকে তিনি নিজেকে কার্যত সরিয়ে নিয়েছেন। অপরদিকে লালকৃষ্ণ আদবাণী ছিলেন সংসারী, তবে তিনি প্রচারক জীবন ছেড়ে দেওয়ার পরই তা করেছিলেন।

মহারাষ্ট্র, ওড়িশা বা মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে বহু প্রচারক পরে সংসারী জীবনে ফিরে গেছেন। পশ্চিমবঙ্গেও এমন উদাহরণ রয়েছে। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেননের মতো পরিচিত মুখেরা এক সময় আরএসএস প্রচারক ছিলেন, পরে সংসারী হয়েছেন।

নারীদের জন্য আলাদা সংগঠন

আরএসএসের নারী সদস্য নেই। নারীদের জন্য ‘রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি’ নামে একটি পৃথক সংগঠন রয়েছে, যেখানে মেয়েরা আলাদাভাবে সংগঠিত হন।

সব মিলিয়ে, দিলীপ ঘোষের বিয়ে নিয়ে যত আলোচনা গণমাধ্যমে হচ্ছে, সংগঠনের ভেতরে তা নিয়ে তেমন কোনো উত্তেজনা বা বিস্ময়ের জায়গা নেই বলেই জানাচ্ছেন সংঘ ও বিজেপির নেতারা।

বিবিসি বাংলার তথ্য অবলম্বনে


নিউজটি আপডেট করেছেন : জার্নাল ডেস্ক

কমেন্ট বক্স